লিটল হাউজ অন দ্য প্রেয়ারি: সহজ-সরল জীবন বর্ণনার আড়ালে নতুন আমেরিকার আলো ও অন্ধকারের ইতিহাস

যাকে আমরা চিনি, যার গল্প শুনি বা যার মুখে শুনি সে-ই আমাদের আপন। নইলে তো আরও কত লোক আছে, তারা আমাদের আগ্রহের সীমায় বাস করে না। বনের মাঝে যার জন্ম, ওয়াগনে বয়ে চলা, খালের পাড়ের ফুলের মাঠে বিচরণ, আর দিগন্ত বিস্তৃতি ঘাসের প্রান্তরে যার সংগ্রামী জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়টি পার করেছে সেই লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডারের লেখা আত্মজীবনী লিটল হাউজ সিরিজ পড়ে লক্ষ লক্ষ মেয়ে লরার মাঝে নিজেকে খুজে পেয়েছে অথবা লরার মত হতে চেয়েছে। সত্যি সত্যি কেও সে সুযোগ পেলে লরার ফুলেল জীবনের সাথে সাথে পরিশ্রমী ও সংগ্রামী জীবনটাও গ্রহণ করতে পারত কিনা সে এক প্রশ্ন!

সারা পৃথিবী জুড়ে লিটল হাউজ সিরিজ পঠিত হয় সহজ সরল জীবনালেখ্য হিসেবে। একেবারেই পারিবারিক আখ্যান। সামাজিক মূল্যবোধ, সততা, দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিশুদের পড়ানো হয়। বিদ্যালয়গুলোতে পর্যন্ত পাঠ্য তার কাহিনী।

এটা সেই সময়কার কথা যখন আমেরিকার যুক্তরাষ্টের আকার ছিল বর্তমানের তিন ভাগেরও একভাগের কম। তিনশত বছরের বেশি হয়ে গেছে ইউরোপীয়রা আসা শুরু করেছে, এর মধ্যে বেশ কয়েক প্রজন্ম পার হয়ে গেছে। ১৩ টি রাজ্য নিয়ে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীন হয়েও প্রায় এক শতাব্দী হয়ে গেছে। অভিবাসীরা তের রাজ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আরও আরও পশ্চিমে, আয়ত্বে নিচ্ছে নতুন নতুন এলাকা, লক্ষ্য একটা নিশ্চিত আবাস, নিশ্চিৎ জীবিকা। তাদের প্রধান পেশা কৃষি ও শিকার। তবে এটা সব আমেরিকারনের জীবন নয়। এর পাশাপাশি শহরকেন্দ্রীক একটা জীবন ব্যবস্থাও এগিয়ে চলেছিল, তাদের জীবীকা অন্য রকম। কিছু যায়গায় তারা এসে মিলে যায়। তাদের খাদ্যের যোগান দিতে কৃষিভিত্তিক যে আমেরিকা তার জীবনকথা এই লিটল হাউজ সিরিজ।

তারা আসলে শুধু নিজেদের ও নগরবাসীদের খাদ্যে উৎপাদন করছিল না, তারা সীমাবৃদ্ধি করছিল আমেরিকার। যেখানে আমেরিকানরা যায় নি, সেখানে তারা যাচ্ছিল নতুন জমির আশায়। বাসা বাধছিল, গাছ কেটে বা ঘাস কেটে নতুন নতুন কৃষি জমি বের করছিল, চাষ করছিল, পশুপালন করছিল, নিজেদের জন্য সারা বছরের খাদ্য যোগান করছিল। জমির উর্বরতা ফুরিয়ে গেলে আবার এগিয়ে যাচ্ছিল নতুন উর্বর ভূমির আশায়। এই এগিয়ে যেতে যেতে নতুন নতুন এলাকা তারা ঢুকিয়ে দিচ্ছিল আমেরিকায়, সৃষ্টি করছিল নতুন বসতি।

লরার বাবা এমন একজন কৃষক যিনি জীবনের প্রথমার্ধ উপযুক্ত কৃষিভূমির জন্য ছুটে বেরিয়েছেন, তার সাথে পুরো পরিবার। আমরা ইতিহাস পাঠ করি সাধারণত গবেষক বা দর্শকের চোখ দিয়ে। সেখানে শুধু তথ্য জানা যায়, অনুভব করা যায় না। এখানে দৈনন্দিন জীবন আর ছুটে চলার বিবরণের মধ্যে দিয়ে একটা সময়ে ইতিহাস জানতে পারছি খোদ বাস্তব চরিত্রের মুখ থেকে।

লরাদের কয়েক প্রজন্মের জন্ম আমেরিকায়, ‘পুবে”র রাজ্যগুলিতে। তারা কৃষক ও দরিদ্র, রাষ্ট্রের সীমাবৃদ্ধিতে পশ্চিম যাত্রায় তারা অগ্রগামী, ফ্রন্টিয়ার।

সেই সময়ের প্রেক্ষিতে প্রচুর চটকদার সাহিত্য রচিত হয়েছে

লিটল হাউজ অন দ্য প্রেয়ারি: সহজ-সরল জীবন বর্ণনার আড়ালে নতুন আমেরিকার আলো ও অন্ধকারের ইতিহাস

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান